Monday, 10 March 2025

মহাকুম্ভে পুণ্যস্নান

মহাকুম্ভে পুণ্যস্নান


কাকভোর থেকেই ভাবছি কখন যাব। কখন আসবে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ । অবশেষে প্রায় ছটা নাগাদ গাড়ি এলো। অটোগাড়ি। আমাদের যেতে লাগল বড়জোর ২০ মিনিট। স্নান ঘাটের কাছেই নাবলাম। তখন লোকে - লোকারণ্য চারপাশ। যত ঘাটের কাছে যাচ্ছি, তত ভীড় বাড়ছে। তবে শৃঙ্খলিত ভীড়। 

গুগুলে দেখলাম ত্রিবেণী সঙ্গম ঠিক কোথায়। 

এরপর স্থির লক্ষে হেঁটে চলা। পায়ে পায়ে। ভীড় সরিয়ে। সবাই স্নান - দৈব আহুতিতে ব্যস্ত। কাউকে সরতে বলতেও খারাপ লাগছে। কিন্তু যেতে যে হবেই। 

তীর থেকে জলে নামলাম। যত মানুষ পাড়ে, তার চেয়েও বেশি মানুষ জলে চান করছেন। পায়ে পায়ে জল পেড়িয়ে যেতে লাগলাম দূরে একটা চড়া লক্ষ করে। কিছুটা যেতেই কোমর সমান জল পেলাম। একটু ভয় করবে। কারণ হাতে মোবাইল। কিন্তু ভরসা একটাই,  বর্ষাকালে ব্যাগপিঠে কলকাতার রাস্তায় কোমর জলে হাঁটার অভিজ্ঞতা। 

সেই চড়া পেরিয়ে আবার জল। 

এবার মোবাইল আর হাতব্যাগ পাড়ে রেখে জলে নামা। DMG - এর আধিকারিক যত্ন করে মোবাইলে স্নানের ছবি তুলে দিলেন। কৃতজ্ঞতা জানাতে একটা ছবি নিতে চাইলাম স্নানের পর। হাসিমুখে দুদিকে ঘাড় নাড়লেন। 

পুণ্যস্নান এবং সূর্য প্রণাম করা হল। 

জীবনে প্রথমবার হয়তো উপলব্ধি করলাম পরম শান্তি কী! 

কৃতজ্ঞতাঃ 
সুনীল টুডু , আমার বন্ধু - এই যাত্রায় আমাদের পথ প্রদর্শক। এর আগেও এই মহা কুম্ভে এসেছিলেন, আবার এলেন আমাদের সারথি হয়ে। আমার সন্তান তুল্য রথীন, যার প্রতি মুহূর্তের নজরদারি আমাদের যাত্রাকে আরও মসৃণ করেছে এবং সন্দীপদা , আমাদের গাড়ী চালক। যিনি আমায় গাড়ি চালান শিখিয়েছিলেন। প্রায় ১৭০০ কিলোমিটার যৎসামান্য বিরতি নিয়ে গাড়ি চালান, বিশেষ করে ফেরার সময় - নাগাড়ে ১০০ - ১২০ কিলোমিটারে ড্রাইভ - ওনাকেও অনেক শ্রদ্ধা। আসলে নানা জায়গায় মহাকুম্ভ যাত্রা নিয়ে যে ভয়াবগ ছবি চোখে পড়েছে, আমাদের অভিজ্ঞতা একেবার ভিন্ন। এও হয়তো তাঁর অশেষ করুণার আরেক রূপ। 


Maha Kumbha (Ep - 3) | অচেনা পথে প্রয়াগরাজ থেকে কলকাতায় ফেরা


প্রায় হাজার কিলোমিটার পথ পেরিয়ে আমরা বাড়ি ফিরলাম। প্রথম দিকে রাস্তা ভয়ঙ্কর, প্রচুর ডাইভারসান। প্রায় কাঁচা পথ। রাতে এই পথে যাওয়া খুব বিপদজনক। পরদিন সকাল থেকে আবার শুরু। এবার পাহাড়ি জঙ্গলের পথে ভেসে চলা। দুধি থেকেই ফুল ট্যাঙ্ক করে নিয়ছিলাম। মোটামুটি জানা ছিল এই পথে পেট্রল পাম্প কম পাব। তবে কল্পপনাও করতে পারিনি, পেট্রল পাম্প থাকবেই না। প্রায় ৪ - ৫ ঘণ্টা, কোন পাম্প নেই, কোন খাবার দোকান নেই, মানুষজন খুব বেশি হলে ১০ জনকে দেখলাম এই পাঁচ ঘণ্টার পথে। বেতলার দরজা সেদিন বন্ধ ছিল, নয়ত আর একটা জাতীয় উদ্যান দেখার পালক আমাদের টুপিতে জোড়া হত। শেষ ছ-সাত ঘণ্টা, রাঁচির পর থেকেই, উন্নত হাইওয়ে। গাড়ি এবার ছুটবে ১০০ - ১২০ কিমিতে। চারদিক অন্ধকার। মাঝে আসে দলমা পাহাড়ের কুখ্যাত এলিফান্ট করিডর। তবে কখন হর্ন , কখন লাইট সিগন্যাল দিয়ে প্রায় ভোর তিনটে তে বাড়ি এলাম। 

প্রায় ১৭০০ কিলোমিটার গাড়িতে যাবার অভিজ্ঞতা আগে কখন হয়নি। তবে এই দীর্ঘ ড্রাইভের রোমাঞ্চ কে অতিক্রম করে মনের মধ্যে টের পেয়েছি পরম শান্তি আর শ্রদ্ধা। 

শুধু মা গঙ্গা,  মা যমুনা বা  মা সরস্বতীর জন্য নয়, আমাদের মনের এই প্রশান্তি ও শ্রদ্ধার উৎস মুল চোখে দেখা শত-সহস্র সাধারণ ভারতীয়। 

বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য তো আমরা অনেক বার পড়েছি। 

মহাকুম্ভে এসে চোখে দেখলাম তার প্রকৃত রূপ। 

জয় মা গঙ্গা
জয় মা যমুনা
জয়  মা সরস্বতী
জয় দেবাদিদেব মহাদেবের জয়